বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন

৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক
আজকের তারিখঃ বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন
বঙ্গোপসাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভান্ডারের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার।

টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) থেকে আবারও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা শুরু হচ্ছে। ফলে এতদিন প্রাণহীন থাকা জেলে পল্লিগুলোতে আবার ফিরছে  প্রাণচাঞ্চল্য।

সংশিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় কক্সবাজারের প্রায় সাত হাজার মাছ ধরার নৌকা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাগরে নামা শুরু করেছে।

উল্লেখ্য বঙ্গোপসাগরে মাছসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভান্ডারের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় বুধবার মধ্যরাতে। জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও ছিল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বাংলানিজকে জানান, কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৭ হাজার মাছ ধরা ট্রলার রয়েছে। আর এ পেশায় নিয়েজিত আছেন প্রায় লক্ষাধিক জেলে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সাগরে রওনা দেবে তারা। তিনি বলেন, শুক্রবার-শনিবারের মধ্যেই শতভাগ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে যাবে।

শহরের কুতুবদীয়া পাড়ার জেলে মো. আলী আকবর বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউনে পড়ে এমনিতেই জেলেদের দুর্দিন যাচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে চলে আসে সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। যে কারণে এ বছর জেলেদের খুবই মানবেতর দিন কেটেছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পরে এ নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। আমাদের রুটি-রুজির পথ খুলেছে। যে কারণে জেলে পল্লিগুলোতে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাট, কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাট থেকেই জেলার অধিকাংশ ট্রলার সাগরে যায়। বাকি ট্রলারগুলো জেলার অন্যান্য উপকূল থেকে সাগরে আসা-যাওয়া করে।

বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছ ধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে।

ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এসব জেলে বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।

দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বাংলানিউজকে বলেন, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাটের ছোটবোটগুলো নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মাছ ধরতে রওনা দেবে এবং মাছ ধরে শুক্রবার সকালেই ঘাটে ফিরে আসবে। ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের মানুষ ফের সাগরের তাজা মাছের স্বাদ নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে ইলিশ জালের বোটগুলো মাছ ধরে ফিরতে আরো ৫ থেকে ৭ দিন সময় নেবে বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, শুক্রবার থেকে ছোট মাছগুলো বাজারে পাওয়া গেলেও ইলিশ পেতে আরো ৫/৭ দিন সময় লাগবে। ট্রলারগুলো মাছ ধরে কয়েকদিন পর ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান বিপ্লব বাংলানিউজকে বলেন, আগে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রজাতির বড়বড় মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সচরাচর সে রকম মাছ পাওয়া যায় না। প্রজননকালীন সময়েও সাগরে মাছ শিকার এর অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা অারোপের পর থেকে কিন্তু সুফল আসতে শুরু করেছে। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে সাগর মৎস্য ভান্ডারে পরিণত হয়েছে।


এই বিভাগের আরো খবর........
এক ক্লিকে বিভাগের খবর