চলতি শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের সংশোধনী প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাস পার হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সংশোধনী প্রকাশ করা হয়।
এ ছাড়া ইংরেজি বইয়ে ৩৫, গণিতে ৫, বিজ্ঞান ৭, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ৩৬, ডিজিটাল প্রযুক্তি ১, জীবন ও জীবিকা ১৫, শিল্প ও সংস্কৃতি ৫, ইসলাম শিক্ষা ৭ এবং হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১৬টি সংশোধনী দেওয়া হয়েছে।
আর সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সবচেয়ে বেশি ৬৫টি ভুলের সংশোধনী দেওয়া হয়েছে। বাংলা বইয়ে ২০, ইংরেজি ১১, গণিত ২৩, বিজ্ঞান ৪, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ২৫, ডিজিটাল প্রযুক্তি ৫, জীবন ও জীবিকা ২৮, ইসলাম শিক্ষা ৯, হিন্দু শিক্ষা বইয়ে ১২টি সংশোধনী দিয়েছে এনসিটিবি।
সংশোধনী যেভাবে পড়াবেন শিক্ষকরা
ষষ্ঠ ও সপ্তাহ শ্রেণির নতুন সংশোধনী কীভাবে পড়াবেন তার একটি রূপরেখা দিয়েছে এনসিটিবি। রোল কলের কারণে প্রথম পিরিয়ড হবে ৬০ মিনিটের এবং বাকি পিরিয়ড হবে ৫০ মিনিটের।
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবশ্যই প্রতিদিন সমাবেশে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গাইবার ব্যবস্থা করবে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী শরীর চর্চা, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন উপস্থাপনা যেমন গান, নাটক, আবৃত্তি, নাচ, প্রভৃতিসহ অন্যান্য আয়োজন করতে পারে।
এ লক্ষ্যে সমাবেশের সময় বাড়াতে হলে প্রয়োজনে বিদ্যালয় শুরুর সময় এগিয়ে আনা যাবে। কিন্তু কোনো মতেই সেশনের সময় কমানো যাবে না। রুটিনে উল্লেখিত কোনো বিষয়েরই সেশন সংখ্যা বা ক্রম পরিবর্তন করা যাবে না।
জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন (২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, পহেলা বৈশাখ, ১ মে, ১৫ আগস্ট, ১৬ ডিসেম্বর) শিখনকালীন কার্যক্রম হিসেবে ধরা হয়েছে। জাতীয় দিবসে সেশন রুটিন অনুসরণ না করে, দিবস পালনে বিভিন্ন বিষয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকগণ আগে থেকেই পরামর্শ করে শিক্ষক সহায়িকার নির্দেশনা অনুসরণ করে বিদ্যালয়ে জাতীয় দিবসের কার্যক্রম সাজাবেন। যাতে করে এসকল দিবস পালনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যে অভিজ্ঞতা অর্জন করা প্রয়োজন তা অর্জিত হয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণির একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককেই দায়িত্ব দেওয়া যাবে। একই শ্রেণির একই বিষয়ে একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন তাকে সে বিষয়েরই সেশন/শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।
চলতি বছরের নতুন এ শিক্ষাক্রমে নানা ভুল, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আসার পর সমালোচনার মুখে দুটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। প্রথমে এ দুটি পাঠ্যবইয়ের কিছু অধ্যায় সংশোধন করার কথা জানানো হলে পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি এ দুই শ্রেণির সবকটি বইয়েরই ভুল-অসঙ্গতির সংশোধনী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ২২টি বইয়ে ৪২১টি ভুল-ভ্রান্তির সত্যতা পেয়েছে এনসিটিবি। এসব ভুলগুলো সংশোধন করে শুক্রবার এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বিশেষজ্ঞ (মূল্যায়ন) কমিটির প্রতিবেদনে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চারটি বইয়ে ৫৮টি অসঙ্গতিপূর্ণ লেখা খুঁজে বের হয়। এই চার বইয়ে ১৮৮টি ভুল-ত্রুটি শনাক্ত করেছে। এসব ভুল সংশোধনী চূড়ান্ত করে দ্রুত সম্ভব স্কুলপর্যায়ে পাঠানোর সুপারিশ করে কমিটি।