নাটোরের লালপুর উপজেলার পাটিকাবাড়ি বেলায়েত খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য করে সভাপতির বউ সহ নিকটাত্মীয়দের নিয়োগ দেওয়া ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারীরা জানান, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে আরও তিন ব্যাক্তির থেকে নিয়োগের কথা বলে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হক কয়েক লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে তা ভাগবাটরা করেছেন।
অভিযোগকারী ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য সূত্রে জানা যায়, বেলায়েত খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম ও সভাপতি হালিম যোগসাজসে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে তিনটি পদে গোপনে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির অভিবাবক সদস্য সজিব উদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের নিয়োগ বোর্ড ও নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ সর্ম্পকে কোন কিছুই অবগত করেনি। কোনো মিটিং বাদেই গোপনে ২ মাস আগে প্রধান শিক্ষক সভাপতির বউ কানিজ ফাতেমাকে অফিস সহায়ক ও তার নিকটাত্মীয় ফারিয়া ইয়াসমিনকে নিরাপত্তা কর্মী এবং জান্নাতুল ফেরদৌসকে আয়া পদে নিয়োগ দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। কেউ যেন বিষয়টি সম্পর্কে না জানে এজন্য রাতের আধারে ঐ তিন কর্মচারীর হাজিরা খাতায় নিয়মিত সাক্ষর করিয়ে রাখেন তিনি। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করার তাকে পরিচালনা পরিষদের সদস্য পদ থেকে বহিঃষ্কার করারও হুমকি দিয়েছেন সভাপতি-প্রধান শিক্ষক।
পরিচালনা পরিষদের দাতা সদস্য, মোজাফর হোসেন জানান, তার বাবার নামে এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে তার বড় ভাই সভাপতি ছিলেন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে তাকে দাতা সদস্য করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে কোনো আলোচনা বা মিটিং না করে গোপনে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যা সম্পূর্ন অবৈধ।
অভিযোগকারী রতনা বেগম জানান, অফিস সহায়কের পদে নিয়োগ দেওয়ার নামে প্রধান শিক্ষক তার কাছে থেকে চার লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এবং ১ বছরের বেশি বিনা বেতনে তাকে স্কুলে কর্মচারী হিসেবে ব্যবহার করেছে।তবে বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হালিমের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হন নি।
লালপুুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) শিউলি আহমেদ বলেন ,আমি জানুয়ারি মাসে লালপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) দায়িত্ব হিসেবে যোগদান করেছি। শুনেছি নিয়োগ প্রক্রিয়া টি গত নভেম্বরে সম্পন্ন হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আমার পক্ষে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷
এর আগে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করায় গত বছর জুন মাসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল। সাম্প্রতিক নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগে এলাকাবাসীর পক্ষে জহুরুল ইসলাম রিপন আবারো মামলা দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক রাজশাহী অঞ্চলের উপ পরিচালক শারমিন ফেরদৌস সাক্ষরিত এক আদেশে এসব ঘটনার সত্যতা যাচায়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এলাকাবাসীর দাবী, সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। সেই সাথে কলুষিত মুক্ত হোক এই শিক্ষাঙ্গন।