রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফিশিং টুর্ণামেন্টে অংশগ্রহণ শেষে বুধবার দেশে ফিরেছে চার সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল।
রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি কর্পোরেশন- রসাটম আয়োজিত আকর্ষণীয় এই টুর্ণামেন্টে বিশ্বের দশটি দেশের ২৬ জন শৌখিন মৎস শিকারী অংশগ্রহণ করেন। গত ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর এই টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠানের খবর রসাটমের গণমাধ্যম প্রেরীত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।
টুর্ণামেন্টের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বের নিউকিয়ার কম্যুনিটিভূক্ত দেশগুলোর জনগনের মধ্যে পারষ্পরিক বন্ধন সুদৃঢ়করণ এবং একই সঙ্গে পরিবেশের জন্য, বিশেষ করে নিকটবর্তী জলাধারের ফোরা এবং ফাওনার জন্য পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যে নিরাপদ, তা সরেজমিনে প্রদর্শন করা। মৎস শিকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, রাশিয়া, আর্মেনিয়া, হাঙ্গেরী, মিশর, ভারত, কাজাখস্থান, উজবেকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তুরষ্ক।
এসব দেশগুলোতে রসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করেছে বা করছে বা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী দলে ছিলেন দু’জন মৎস শিকারী এবং দু’জন সাংবাদিক। দু’জন মৎস শিকারী- নাসিম হাসান সুজন এবং মিরাজ রহমান খান। এরা উভয়েই শৌখিন মৎস শিকার সংগঠন অহমষরহম রহ ইধহমষধফবংয এর সদস্য। ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটির বিচারে রাশিয়ার বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র লেনিনগ্রাদ এনপিপি’র নিকটবর্তী জলাধারে আয়োজিত টুর্ণামেন্টটি প্রো-এংলার লীগ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়। এ
ই ফরম্যাটটি নৌযান থেকে মৎস শিকারের জন্য ইউরোপীয় ঐতিহ্যের অনুরূপ। ভারতের অরুনাভ সান্নিগ্রাহী এবং সন্তোষ যাইসোয়ার ‘বিগেস্ট সিঙ্গেল ক্যাচ’ এবং ‘টোটাল ক্যাচ’ বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন। মিশরের মৎস শিকারী দল এবং রাশিয়া-মিশর যৌথ মৎস শিকারী দল যথাক্রমে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান লাভ করে। ভারতের আরেক জন প্রতিযোগী বিশেষ পুরষ্কার ‘বিগেস্ট ক্যাচ’ এবং উজবেকিস্তান দল বিশেষ পুরষ্কার ‘ডিটারমিনেশন টু উইন’ লাভ করেন। দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং রুশ জাতীয় দলের কোচ ভালাদের ইনোজেম্টসেভ প্রতিযোগীতায় মূল বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
অংশগ্রহণকারীরা ফিনল্যান্ড উপসাগরে মাছের প্রাচুর্য এবং ডোজিমেট্রিক কন্ট্রোলের ফলে জলাধারের দূষণমুক্ততা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ লাভ করেন। প্রতিযোগীরা মোট ২০৩টি মাছ ধরেন, যেগুলো পরবর্তীতে সাগরের পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। রসাটম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট ভাদিম টিটো বলেন, “বৃহৎ আন্তর্জাতিক পরিসরে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলেও রসাটম গত দশ বছরের অধিক সময় ধরে বিভিন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকটবর্তী জলাধারে এজাতীয় প্রতিযোগীতার আয়োজন করে আসছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারন এই প্রতিযোগীতার মাধ্যমে একটি বিষয় আমরা প্রমান করতে চাই যে, পারমাণবিক শক্তি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ ; পরমাণু প্রযুক্তি এবং প্রকৃতি একে অপরের পরিপূরক।
আমরা আনন্দিত, ৯টি দেশ থেকে আগত অতিথিরা স্বচক্ষে দেখার সুযোগ পেলেন যে, প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে চলমান একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিকটবর্তী জলাধারে বসবাসকারী মাছগুলো কতোটা দূষণমূক্ত”। প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে প্রতিযোগীরা সাসনোভিবোর শহরে অবস্থিত লেনিনগ্রাদ এনপিপি পরিদর্শন করেন এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে সম্যক অবহিত হন। তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। উল্লেখ্য, লেনিনগ্রাদ এনপিপি একটি অনন্য প্রকৌশল স্থাপনা যেখানে দুই ধরণের রিয়্যাক্টর বিদ্যমান।
বাংলাদেশে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে পদ্মার নিকটবর্তী স্থানে নির্মীত হচ্ছে দেশের প্রথম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২,৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন, দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের দায়িত্ব পালন করছে রসাটম। কেন্দ্রটির প্রতিটি ইউনিটে স্থাপিত হচ্ছে একটি করে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর।