রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
শিরোনামঃ
ঈশ্বরদী উপজেলা স্কাউটস’র ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল সম্পন্ন রাশিয়ায় বিশ্বের একমাত্র ভাসমান এনপিপিতে পিয়ার রিভিউ মিশন সম্পন্ন ঈশ্বরদীতে সাংবাদিকদের সাথে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময় ঈশ্বরদীতে সরকারিভাবে ধান চাল ও গম সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধন ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী রানা সরদারের পক্ষে মিছিল ও পথসভা রাশিয়ার বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ আসবে পরমাণু উৎস থেকেঃ রুশ প্রেসিডেন্ট ঈশ্বরদীতে নানা আয়োজনে বিশ্ব মা দিবস পালিত ঈশ্বরদীতে মাটি উত্তোলনের অভিযানে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রানা সরদারের বিজয়ের লক্ষ্যে উঠান বৈঠক ঈশ্বরদীতে পুকুরে পাওয়া গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে

ঈশ্বরদীতে রাসায়নিক সার ও বিষ মুক্ত সবজি ও ফল চাষ

বার্তাকক্ষ
আজকের তারিখঃ রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন
বিষমুক্ত সবজি।

শাকসবজি কিংবা ফল, যে আবাদই হোক না কেন ফসলের মাঠে পড়ে না রাসায়নিক সার। ছিটানো হয় না কীটনাশক। সত্যি সত্যি নেই একরত্তি বিষ! ফলন বাড়াতে তাদের আছে জৈব বালাইনাশক, কেঁচো কম্পোস্ট ও জৈব সার। ফসল আবাদের এমন গল্প ঈশ্বরদীর লক্ষীকুন্ডা গ্রামের কৃষক।

কিছুদিন আগেও যেসব জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে ফসল আবাদ হতো সেসব জমিতেই এখন চাষিরা বিষ না ছিটিয়ে দিব্যি ভালো ফলন ঘরে তুলছেন। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পেছনে চাষিরা যে বাড়তি খরচ করতেন সে তুলনায় জৈব সারের ফসল আবাদে এখন খরচ হচ্ছে অনেকটাই কম। শারীরিকভাবে চাষিরাও আছেন আগের চেয়ে বেশ ফুরফুরে। আবার গ্রামে গ্রামে বেশ কয়েকজন কৃষক নিজ বাড়িতে কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে নিজে যেমন আবাদি জমিতে ব্যবহার করছেন, তেমনি অন্য কৃষকদের কাছে তাদের উৎপাদিত জৈব সার বিক্রি করে স্বাবলম্বী হওয়ারও নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন কৃষক শুধু কেঁচো কম্পোস্ট সার তৈরি করে তা থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডা, সাঁড়া ও সলিমপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষক, মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চাষিরা জানান, যেসব এক ফসলি জমিতে আগে তেমন ফসল কিংবা সবজি উৎপাদন হতো না বললেই চলে এখন সেই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে ফল ও সবজির সমারোহ। কৃষকদের ভাষায়, সার-বিষ প্রয়োগ না করেও যে ভালো ফলন হতে পারে তা তারা দেখিয়ে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতার কথাও বলেন তারা।

সাহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুরের চাষি শাহীনুজ্জামান শাহীন সরদার বলেন, ‘কৃষিতে জীবন বদলে যাবে- এমনটি কখনোই ভাবিনি। সার-বিষ ছাড়াই জৈব বালাইনাশক ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছি সব ফসল আবাদে।’

শাহীন সরদার রাসায়নিক সার কিংবা কীটনাশক ছাড়াই ১৫ বিঘা জমিতে পেয়ারা, ১৫ বিঘা জমিতে বাউকুল, ১০ বিঘা জমিতে গাজর, ৮ বিঘা জমিতে লিচু, ৪ বিঘা জমিতে লাউ, ৫ বিঘা জমিতে কলা ও ৩ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেন। এ ছাড়া এখন তিনি বল সুন্দরী ও কাশ্মীরি বরইয়ের চাষও করছেন।

পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৪০ বিঘা জমিতে শাহীন সরদার প্রথমে বাউকুল লাগিয়ে বেশ সফলতা পান। এ ছাড়া আরও ২০ বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন তিনি। বিশাল আয়তনের এসব জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন পেয়ারা, বাউকুল, লিচুর বাগান। বাগান ছাড়াও বাকি জমিতে গাজর, লাউ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিটি বেগুন, তরমুজ, মুলা, টমেটো ধনেপাতাসহ বিষমুক্ত নানা জাতের সবজি ও ফসল উৎপাদন করছেন তিনি। সার ও বিষমুক্ত উপায়ে আবাদ করে এখন শাহীন সরদার ফল বাগান ও সবজি খামার থেকে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করেন। তার জমিতে উৎপাদিত সবকিছুই মানুষের খাদ্য- এ কথা চিন্তা করে তিনি কখনোই জমিতে এক রত্তিও রাসায়নিক ব্যবহার করেননি বলে জানান।

সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের চাষি মিশন আলী দুই বছর ধরে তার দুই বিঘা জমিতে জৈব বালাইনাশক ও কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে বেগুন আবাদ করছেন। তিনি জানান, আগে জমিতে রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক স্প্র্রে করে বেগুনের আবাদ করতেন। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে বেগুন ক্ষেতে কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক এবং রাসায়নিক সারের বদলে কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে আগের চেয়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন। তার দেখাদেখি একই গ্রামের মজিবর রহমান পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছেন। আবদুল জলিল তার দুই বিঘা জমিতে ঢেঁড়স আবাদ করে সাফল্য পেয়েছেন। লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক আমান মল্লিক, মুকুল প্রামাণিক, কামালপুর গ্রামের জহির উদ্দিনসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২০ জন কৃষক এখন একই উপায়ে আবাদ করছেন বিভিন্ন ফল, ফসল ও সবজি।

এদিকে সার-বিষমুক্ত সবজি আবাদের কারণে ঈশ্বরদীতে জৈব বালাইনাশক ও ডার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার তৈরির প্রতিও ঝুঁকেছেন বেশ কয়েকজন কৃষক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের এমেলি হোসেন, সাঁড়া ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে আরজাহান আলী ও মুক্তার হোসেন কেঁচো সার উৎপাদন করে রীতিমতো জৈব সারের ব্যবসায়ী বনে গেছেন। তারা প্রত্যেকেই বাড়ির আঙিনায় জৈব সার উৎপাদন করে যা আয় করছেন তাতে নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বছরে বাড়তি দুই থেকে তিন লাখ টাকা লাভ থাকছে।

ঈশ্বরদীর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহিদ হাসান হিরোক বলেন, ঈশ্বরদীতে সার-বিষমুক্ত সবজি আবাদ করা অন্তত ২০ জন কৃষকের প্রতি আমাদের আলাদা নজর রয়েছে। যে কোনো প্রয়োজনে আমরা নিজেরাই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে তাদের কাছে ছুটে যাই।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, ঈশ্বরদীতে রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত ফল, ফসল ও সবজি আবাদের প্রতি কৃষক আগের চেয়ে এখন বেশি আগ্রহী। কৃষি অফিসের মাঠকর্মীরা সবসময় এসব কৃষককে তাৎক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন।


এই বিভাগের আরো খবর........
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
error: কপি করার অনুমতি নেই !
error: কপি করার অনুমতি নেই !