গুণে মানে সেরা হওয়ায় সারাদেশেই ঈশ্বরদীর বোম্বাই লিচুর কদর আলাদা। লিচু ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকারী ফসল। লিচু বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে থোকায়, থোকায় ঝুলছে রঙিন লিচু, খাওয়ার উপযোগী হয়েছে।
এ অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ মাটি ও আবহাওয়া লিচু চাষের জন্য খুব উপযোগী। বরাবর ভালো দাম পাওয়ায় লিচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। এসব এলাকার সড়ক বা মহাসড়ক ধরে গেলে রাস্তার দুপাশে চোখে পড়ে শুধু লিচু, লিচু। কিন্তু এবার দৃশ্যপট ভিন্ন। এবার লিচু গাছে শুধু পাতা আর পাতা। পাতার ফাঁকে উকি মারছে কিছু কিছু লিচু।
লিচু চাষীদের সঙ্গে বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় মাত্র ২০ ভাগ গাছে এ বছর লিচুর মকুল এসেছিল। আর বেশির ভাগ গাছই ছিল মকুল শূণ্য। মকুল না আসায় বিশেষ করে বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন লক্ষ্যমাত্রায় এক পঞ্চমাংশ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। লিচুর ফলন বিপর্যয়ের কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলুবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এবার ঈশ্বরদীতে বোম্বাই লিচুর ফলনের বিপর্যয় ঘটেছে। সাধারণত জানুয়ারি মাসের শেষে এবং ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমে বোম্বাই লিচু গাছে মকুল আসে। কিন্তু এবারে মধ্য জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ কমে যাওয়ায় মকুল কম অঙ্কুরিত এবং বেশি পরিমান পাতা গজিয়েছে।
লিচু চাষীরা বলছেন, এ বছর প্রাকৃতিক কারণেই প্রায় ৫ ভাগের ৪ ভাগ গাছেই মকুল ছিল না। গাছে পাতার ফাঁকে ফাঁকে যে মুকুল আসে তা গুঁটি তৈরির সময়ই বিপর্যয় দেখা দেয়। পরবর্তীতে দাবদাহ এবং খরার কবলে পড়ে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মানিকনগর এলাকার লিচু চাষি এস এম শিশির মাহমুদ দৈনিক ইশ্বরদী নিউজকে বলেন, গত বছর ভাল ফলন হওয়ায় প্রায় আট লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলাম কিন্তু এবারে সিকি (চার ভাগের একভাগ) গাছে মকুল এসেছিল এবারে মকুল কম আসায় মাত্র দুই লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে।
ফলন বিপর্ষয় নিয়ে অবশেষে ঈশ্বরদীর সুস্বাদু বোম্বাই লিচু অল্প অল্প করে বাগান থেকে মোকামে আসতে শুরু করেছে। শনিবার জয়নগর, আওতাপাড়া লিচু মোকামে পাইকারি হিসাবে ২৪শ’ থেকে ২৮শ’ টাকায় প্রতি এক হাজার লিচু বিক্রি হয়েছে। মোকামে আাঁটির লিচু উঠলেও বোম্বাই লিচু পুরোপুরি বাজারে আসতে এখন ও সপ্তাহ খানেক সময় লাগবে বলে জানান লিচু চাষিরা।
এবার লিচুর ফলন কম হলেও এই কম লিচু নিয়েই এখন বাজার বেশ জমজমাট। ভাল দাম পেয়ে ফলন হলেও হতাশার মাঝে আশার আলো দেখছেন লিচু চাষিরা। ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠবেন বলে জানান তারা।