শনিবার অনুষ্ঠিত পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কোথায়ও কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি এবং এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এবারের নির্বাচনে সকল কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিত হয়ে নিজের ভোট দিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে নারী ভোটারদের সমাগম বেশী ছিল। পুলিশের পাঁচস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা চোখে পড়েছে। তবে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি প্রার্থীর নেতা-কর্মীরা মাঠে না থাকায় নির্বাচন নিরুত্তাপ মনে হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিলকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে যেয়ে ধানের শীষের কোন পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি।এসময় ৬৪ নম্বর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দু সুবহান জানান, ধানের শীষের এজেন্টদের কোন তালিকা জমা দেয়া হয়নি। এজন্য এজেন্ট আসেনি। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক এবং কোন বিশৃংখলা না থাকায় ভোটাররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দিচ্ছেন বলে তিনি জানান। ঈশ্বরদীর ২৪টি কেন্দ্রে পরিদর্শনের সময় প্রিজাইডিং অফিসাররা একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
নৌকার প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস সকালে কলেজ কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, স্বত:স্ফূর্তভাবে মানুষ যে ভোট দিতে পারছে, এটা আপনারাই দেখছেন। বিএনপি’র প্রার্থী কোন এজেন্টই দিতে পারেনি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা হয়ত: একসময় বলবে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভোট চলাকালে দুপুর ১২টার দিকে ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব সাহাপুরের নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে অনিয়ম এবং নেতা-কর্মী- সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ করেছেন। এসময় তিনি জানান, ভয়ে তাঁর নেতা-কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং বাড়িতে থাকতে পারছে না। তাই পোলিং এজেন্টরাও ভোট কেন্দ্রে যেতে সাহস পায়নি। তবে তিনি নিজেও ভোট দিতে যাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি ভোট বর্জন নয়, ভোট বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবী জানান।
হাবিবের সংবাদ সম্মেলনের পর দুপুর ১টার দিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক ও উপনির্বাচনের সমন্বয়ক এস এম কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, হাবিব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চায়নি, নির্বাচনের নামে নির্বাচন বাণিজ্য করেছে। ঈশ্বরদী ও আটঘোরিয়ার মানুষের সাথে হাবিব উপহাস ও প্রতারণা করেছে। তিনি আরো বলেন, হাবিব কোন কেন্দ্রেই এজেন্টই দেয়নি। শোচনীয় পরাজয় বুঝতে পেরে শুক্রবার থেকেই হাবিব নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পায়তারা করেছে। হাবিব ঘরে বসে থেকে শুধু সাংবাদিকদের কাছে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ উত্থাপন করেছে। কোথায়ও ভোট চাইতে যায়নি এবং নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্যও বলেনি। এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, ধানের শীষের কোন এজেন্ট ফরমে হাবিব সই করেছে কিনা ?
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গির জানান, কোন সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে। অনিয়মের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভোটারদের উপস্থিতি ছিল মোটামোটি সন্তোষজনক। এখন ভোট গণণা চলছে।
প্রসঙ্গত: ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পর পর পাঁচবার পাবনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ২রা এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হলে এই আসনটি শুণ্য হওয়ায় এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও হাবিবুর রহমান হাবিব এই আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে দুপুর ২টার দিকে নির্বাচন তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।