বৃষ্টি কমলেও উজানের পানি নিচের দিকে নেমে আসায় এখনো বন্যা উপদ্রুত এলাকা ৩১ জেলা। এসব জেলার ১৪৩টি উপজেলার ৭৯৪টি ইউনিয়নে পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১। উজানের পানির কারণে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া ও বন্যা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শনিবার (২৫ জুলাই) এই পর্যন্ত ৩১ জেলায় মোট ২৯ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা বাড়তে থাকতে পারে। একই সময়ে বাড়বে পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি। ঢাকা জেলার আশেপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীরগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে জেলাগুলোর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর, ঢাকা কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ,নাটোর ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানও সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, গাইবান্ধা, রাজবাড়ী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, জামালপুর এবং নওগাঁ জেলায় আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। এরপর পানি কমতে পারে । তারপরও সমুদ্রে যদি জোয়ার থাকে তাহলে মধ্যাঞ্চলের পানি কমতে বিলম্বিত হতে পারে, তা না হলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশের সব এলাকা থেকে পানি নেমে যেতে পারে ।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত ৩১টি জেলা হলো, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ।
১৭ নদীর ২৭ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপর
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া পয়েন্টের পানি ৬৫, চিলমারী পয়েন্টে ৭৭, ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ৭৫, করতোয়া নদীর চকরহিমপুর পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহতি হচ্ছে।
এদিকে যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ১০৪, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে নতুন করে ১১০, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ১১৭, কাজিপুর পয়েন্টে ৯৪, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮৩, আরিচা পয়েন্টে ৬৬, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০২, সিংড়া পয়েন্টে ৯০, ধলেশ্বরী নদীর জাগির পয়েন্টে ৮০, এলাসিন পয়েন্টে ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। লাক্ষ্যা নদীর নারায়ণগঞ্জ পয়েন্টে ২৭, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ৯৮, আত্রাই নদীর আত্রাই পয়েন্টে ২৭, বালু নদীর ডেমরা পয়েন্ট ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১১১, ভাগ্যকূল পয়েন্ট ৭০, মাওয়া পয়েন্টে ৬১ এবং সুরেশ্বর পয়েন্টে ৩০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ২৭, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টের ৩০, মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ২৭, আরিয়ালখান নদীর মাদারীপুর পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ভারতের আসাম, মেঘালয়, এবং হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টি কমে আসলেও আগামী তিন থেকে ৪ দিন আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে এ সময় সাময়িকভাবে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদনদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ভারী বৃষ্টি কমে এলেও উজানের পানি এখন নিচের দিকে নামছে। ফলে মধ্যাঞ্চলে পানি এখন বাড়বে। আগামী কয়েকদিন আর ভারী বৃষ্টি হবে না। এতে পানি নেমে গেলে আর বাড়ার শঙ্কা নেই।