এস এম রাজা // ভালকে ভাল মন্দকে মন্দ বলার মানসিকতা বর্তমান সময়ে একেবারেই প্রায় হারিয়ে ফেলেছে মানুষ। যদিও বা দু’একজন এমন মানুষ পাওয়া যায় তবে সে মুখে তালা মেরে রাখেন। কারণ, সংকীর্ণমনা নিন্দুক সমাজ নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করবে এই ভয়টাই তার বেশি। তাতে কি?
নিন্দার ভয়ে সত্য প্রকাশে কুন্ঠা বোধ করায় হচ্ছে ভীরুতা এবং পরোক্ষভাবে নিন্দুকদের উৎসাহিত করা। সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা কেবল কৌশলে কৃতিত্ব চুরি করে। আত্মিকতৃপ্তি পায় নিজের অবৈধ প্রশংসায়। অন্যের সত্যটা প্রকাশে গা জ্বলে। আবার সমাজের কোন কাজই কোনদিন না করেও সে হয় সমাজসেবী। মানবতার লেশ মাত্র নেই অথচ মানব প্রেমিক,মানবতার ফেরিওয়ালা ইত্যাদি।
এইসব বিশেষণে বিশেষায়িত হন ছলে-বলে- কৌশলে। এই সমাজের কিছু অর্থলোভী নির্বোধ মানুষ আছে যারা সত্যটাকে আড়াল করে মিথ্যাটাকে জাহির করতে সাচ্ছন্দ বোধ করে অথচ এই সমাজেই আবার এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রকৃত পক্ষেই মানবতাবোধ সম্পন্ন, মানবপ্রেমিক এবং মানবতার ফেরিওয়ালা। নিরবে নিঃশব্দে যারা মানব কল্যাণে, মানব সেবাই ব্রত আছেন কিন্তু কখনও প্রকাশ করতে চান না নিজেকে ।
পেশাগত কারণে কিঞ্চিত প্রকাশ হলেও তা সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এরকমই একজন মানুষ জনাব শিহাব রায়হান। গত ২০১৯ সালের ৩ অক্টোবর ঈশ্বরদীতে উপজেলা র্নিবাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তাকে দেখছি সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষ । একজন প্রশাসক যে এতোটা মানবিক গুণাবলি ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হতে পারে তা আমার জানা ছিল না। এখানে যোগদানের পর করোনা পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত তাকে দেখেছি বিভিন্ন সময় হা-পিত্তেস ও অনুসুচনায় ভুগতে। তিনি অনেকটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন যে,ঈশ্বরদী এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা যে এখানে সরকারের মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া অনেক বেশি। পদ-পদবীর কারণে প্রটোকলের দায়িত্ব পালন করতে ব্যাপক সময় দিতে হয়।
এ কারণে ঈশ্বরদীর মানুষের জন্য যতটুকু কাজ করার প্রয়োজন তার অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও দায়িত্ব পালনে তার কোন ত্রুটি নেই। কতটা বিবেকবোধ আর দায়িত্ব সচেতন হলে এমনটা বলা যায় তা সহজেই অনুমেয়। করোনা কাল শুরু হবার পর তাকে দেখলাম সম্পূর্ণ অন্যরকম এক শিহাব রায়হান। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সে ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনামুলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা,করোনায় বন্দি অসহায় মানুষ গুলোর খাদ্য যোগান দেয়া, করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে জীবন বাজী রেখে ছুঁটে বেড়াচ্ছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে। হয়তো কেউ কেউ বলবেন এটা তার সরকারি ডিউটি। না , বিষয়টি এতো সংকীর্ণতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে অকৃতজ্ঞ হিসেবেই চিহ্নিত হতে হবে। কারণ, ডিউটি পালনের তো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকে। ইচ্ছা করলে তিনি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারতেন কিন্তু তিনি তা থাকেন নি। সময়-অসময় নেই, দিন আর রাত নেই । তার মানবিক দায়িত্ববোধ তাকে পরিচালনা করেছে অসহায় মানুষের টানে মমত্ববোধ থেকে। গভীর রাতেও তাকে দেখাগেছে কোন না কোন অনাহারী মানুষের পাশে দাঁড়াতে। খাদ্য সামগ্রী তুলে দিতে হাতে। এরকম অনন্য দৃষ্টান্ত অনেক আছে তার। যার সাক্ষী হয়তো দু’চারজন ছাড়া পাওয়া যাবে না। তাতে তার কিছু যায় আসেনা। যারা মানব প্রেমিক তারা স্রষ্টার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হয়। মানুষ কি বললো না বললো সেই অপেক্ষায় থাকে না। উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন হওয়ার পর থেকে এখানে অনেকেই এসেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য।
কম-বেশি সবার সাথেই একটু-আকটু ঘনিষ্টভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে আমার। পেশাগত কারণেই অনেক কর্মকান্ডও করার সুযোগ হয়েছে এক সাথে। তারা অমানবিক ছিলেন একথা বলবো না তবে সব গুনের বাইরেও যে বিশেষ একটি গুন মানুষ হিসেবে থাকা উচিত সেটা জনাব শিহাব রায়হানের মধ্যে আছে এবং তা একটু আলাদায়। একজন প্রশাসকের মধ্যে এতোটা মানব প্রেম থাকতে পারে তা একেবারেই অবিশ্বাস্য অন্তত আমার কাছে। সরকারি দায়িত্ব যথাযতভাবে সম্পাদনের পাশাপাশি সামাজিক,সাংস্কৃতিক।ক্রীড়া, সাহিত্য,ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সকল ক্ষেত্রে সমানতালে নিজেকে উপস্থাপন করছেন তিনি যা মানবিকতারই আর এক অনন্য উদাহরণ।
তার মধ্যে নিজেকে বিচার করার যে একটি পাল্লা থাকা দরকার সেটিও সার্বক্ষণিক উপস্থিত প্রমাণিত হয়। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সংসার জীবনে একজন দায়িত্ব সচেতন স্বামী এবং পিতা। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পরিলক্ষিত হয় প্রতিনিয়তই একটু সুক্ষ দৃষ্টিতে দেখলেই। জনাব শিহাব রায়হান বাহ্যিক দিক থেকে উপজেলা নির্বাহীঅফিসার ও নির্বাহী হাকিম হলেও মনে প্রাণে একজন কমল মনের মানুষ। মানবস্বত্তা যার সদা জাগ্রত।
মানব কল্যাণে যার মন কাঁদে। কার্যতঃ তার প্রমাণ অহরহ পাওয়া যায়। তাই যদি বলি তিনি শুধু প্রশাসক নন, তিনি একজন মানব প্রেমিক, একজন মানবতার ফেরিওয়ালা তাহলে ভুল হবেনা। চাকরির নিয়মে হয়তো তিনি এক সময় বদলী হয়ে চলে যাবেন অন্যখানে কিন্তু ঈশ্বরদীরবাসী তার এই বিশেষ গুনাবলী ও মানব প্রেমের কথা স্মরণ রাখবে আজীবন। জংসন ও ডিডিপির পক্ষ থেকে তার ও তার পরিবার বর্গের জন্য রইলো শুভাশিষ ও শুভ কামনা। দীর্ঘজীবি হউন, উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি লাভ করুন চলার পথে। জ্যোতিরময় হোক আপনার জীবন এই প্রত্যাশা।
এই বিভাগের আরো খবর........