বার্তা কক্ষ !! আজ শনিবার (২০ জুন) বিশ্ব শরণার্থী দিবস। তবে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত ১১ লাখ রোহিঙ্গার দেশে ফেরা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। তারা জানে না কবে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে পারবে। আন্তর্জাতিক মহলের নানা তৎপরতা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়ায় এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলের দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিরাপদ ও মানসম্পন্ন প্রত্যাবাসন পিছিয়ে গিয়েছে বারবার। এছাড়াও বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস নিয়ে দাতা দেশগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ায় চাপা পড়ে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব কার্যক্রম। একই কারণে সবধরনের জবাবদিহিতা থেকেও পার পেয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার।
রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, “জানি না আমাদের দেশ মিয়ানমারে কবে ফিরতে পারব। এমনিতেই মিয়ানমারের নানা টালবাহানা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদিচ্ছার অভাব, তার ওপর মরণব্যাধি করোনাভাইরাসের কারণে ঘোর অন্ধকারে পড়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। একারণে আমাদের প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কিনা জানে না কেউ।”
একই কথা বলছেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মাহমুদুল করিম, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিনারা বেগম, লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ করিম, মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিল মোহাম্মদ, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ অনেকেই। তারা বলেছেন, আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রত্যাবাসন করার জন্য। তবে মিয়ানমারের ছলচাতুরির ফাঁদে আজ পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ, নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও নিজ দেশে তাদের প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তাও কমে আসছে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে বিশ্বের বিশাল এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা। বাড়ছে খুন-খারাবি, মাদকপাচার থেকে শুরু করে নানা অপরাধ। স্থানীয় লোকজনও ক্রমেই ধৈর্য হারাচ্ছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। এমনিতেই রোহিঙ্গাদের ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন দিনও হবে না।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে আজ আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন প্রথম শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলেদলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ব্যাপকহারে আগমন ঘটে। রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। ফলে নতুন ও পুরনো মিলিয়ে বর্তমানে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে আছেন।