বার্তা কক্ষ !! কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে সকলে একটি অ্যাপ ব্যবহার করে প্রোফাইল বা কাভার পিকচার তৈরি করছেন। হলুদাভ আভাযুক্ত ই ছবিতে এখন ফেসবুক সয়লাব।
আপনিও যদি ট্রাই না করেন তাহলে অন্য বন্ধুদের থেকে পিছিয়ে পড়েছেন ভাবছেন? কেবল সাম্প্রতিক এই অ্যাপই নয়, কত বছর বয়সে আপনি দেখতে কেমন হবেন, আপনার নাম দিয়ে আপনার সম্পর্কে কী জানা যায় এমন নানা অ্যাপ হুটহাট সামনে এলেই হুমড়ি খেয়ে তার ব্যবহার শুরু হয়।
এই আচরণকে তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, সাময়িক এসব ছেলেমানুষিতে মজা করছেন বটে কিন্তু এর মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত নানা তথ্য চলে যাচ্ছে অ্যাপ এর মালিকের হাতে। এতে ব্যবহারকারীর জীবন ও অ্যাকাউন্ট দুই-ই পড়তে পারে ঝুঁকিতে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ২০১৯ সালের তথ্য মতে, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ২৫ লাখ ৮৩ হাজার এবং প্রায় সাড়ে ৯ কোটি গ্রাহক মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ কেবল অ্যাপ ব্যবহারের কারণে তাদের গোপনীয় সব তথ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বেচ্ছায় তুলে দিচ্ছেন।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, যেকোন অ্যাপ যারা এধরনের বিষয় কেন্দ্রিক সেগুলো যদি ‘ট্রাস্টেড অ্যাপ’না হয় তাহলে যে তথ্যগুলো নেয় সেগুলো বিপদের কারণ হতে পারে। ধরুন মোবাইল ডায়ালার অ্যাপ। তারা আপনার মোবাইলের ক্যামেরা ইউজ করতে চাইবে। আপনার একটা ছবিটা তুলে পাঠাতে হবে। এনআইডি কার্ড পাঠাতে হবে। এসব হয়তো তারা সংরক্ষণ করছে। কোন দুষ্টু লোক যদি ভিন্ন উদ্দেশ্যে কাজে লাগায় তখন কিছু করার নেই।
মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যাণ্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড এর রিসার্চ অ্যাণ্ড ইনোভেশন এর মেহেদি হাসান সুমন মনে করেন টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস না জেনে এসব অ্যাপ ব্যবহারে ব্যক্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। আমরা ওই অংশটুকু পড়েও দেখি না। একটার পর একটা স্তর অনুসরণ করি। এতে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো চলে যায়। এর ফলে ব্যবহারকারী কত বিপদে পড়তে পারে এটা সে নিজেও জানে না। আর এই জানানোর কাজটা একইসাথে পরিচালনা করাটাও জরুরি। এরজন্যই বারবার ইন্টারনেট শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়। এর বাইরেও সবসময় তথ্য কাউকে না কাউকে দিচ্ছি আমরা।
তা না হলে ফেইসবুকে যার যেইটা প্রয়োজন সেই বিজ্ঞাপন সামনে আনা হয় কীভাবে? তথ্য নিরাপদ রাখা এসময়ে খুবই কঠিন।
‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের’ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলামও মনে করেন তথ্য নিরাপদ রাখা এসময়ের বড় চ্যালেঞ্জ এবং কঠিন কাজ। তিনি বলেন, অনেক অ্যাপ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি করে। সচরাচর এসব দেখলেই ব্যবহারকারীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কোনটা খারাপ বা ভাল সেটা খালি চোখে সবসময় দেখা যায় না। তাই নিজেকে বিরত রাখাটাই শ্রেয়।