নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- পাবনার মধ্য শহরের একটি বাড়ী থেকে অবস্রপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা সহ একই পরিবারের তিন জনের হত্যা কান্ডের রহস্য জট খুলতে শুরু করেছে। মরদেহ উদ্ধারের পর পরই গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল এক ব্যাক্তিকে আটকের পর পুলিশের হাতে চলে আসে এই আলোচিত ঘটনার অনেক ক্লু। তবে, তাদের কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পাবনা পুলিশের উদ্ধতন এক কর্মকর্তা।
পুলিশ জানায়, শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সংলগ্ন পুরনো একটি দ্বিতল বাড়ির নিচ তলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার (৬০) তার স্ত্রী সুম্মা খাতুন (৫২) ও মেয়ে সানজিদা (১৪) কে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকতেন। শুক্রবার দুপরে বাড়িটি থেকে পচা দুর্গন্ধ পেয়ে খোঁজ নিতে আসেন প্রতিবেশীরা। অনেক ডাকাডাকির পরেও দীর্ঘক্ষণ কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে, পুলিশে খবর দিলে বাড়িটির তালা ভেঙে আব্দুল জব্বারসহ তার পরিবারের তিন সদস্যের উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্বজনরাও।
প্রতিবেশীরা জানান, আব্দুল জব্বারের সাথে স্থানীয় কারো বিরোধ ছিলো না। পাবনা কালেক্টরেট স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী দত্তক নেয়া একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নির্ঝঞ্চাট পরিবার। মধ্য শহরে তাদেরকে এমন নৃশংস হত্যায় হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
নিহত আব্দুল জব্বারের ভাই মনিরুজ্জামান ও বোন নাজমা খাতুন জানান, শুক্রবার আব্দুল জব্বারের একজন প্রতিবেশী তাকে ফোন করে বাড়িটিতে কারো সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান। খবর পেয়ে তিনি আসার পরেও কেউ দরজা না খোলায় পাশের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে ভাবী সুম্মা খাতুনকে বিছানায় রক্তাক্ত পড়ে থাকতে দেখেন। বাড়ির আলমারি ভাঙা পুরো বাড়িতেও ল-ভন্ড অবস্থার কথাও জানান তিনি।
মনিরুজ্জামান আরো বলেন, আমার ভাই খুবই নিরীহ প্রকৃতির। তার সাথে কারো কখনো শত্রুতা ছিল না। তাকে স্বপরিবারে এভাবে মরতে হবে কোনদিন কল্পনাও করিনি। হত্যার পর ল-ভ- বাড়িতে খুনীরা লুটপাটও চালিয়েছে বলে ধারণা প্রত্যক্ষদর্শীদের। মধ্য শহরের প্রধান সড়কের পাশের একটি বাড়িতে এমন ঘটনায় নিরপত্তাহীনতায় ভুগছেন প্রতিবেশীরা।
বোন নাজমা খাতুন জানান কান্না জড়িত কন্ঠে আরো জানান, আমার ভাইয়ের মতো শান্ত মানুষ একটিও চোখে পড়ে না। তারপরেও কারা আমার ভাইকে স্বপরিবারে এভাবে হত্যা করছে, তাদের আমি শাস্তি চাই বলে কান্না কাটি শুরু করেন।
আব্দুল জব্বারের প্রতিবেশী ইমন হোসেন জানান, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় খুনীরা নির্বিঘেœ হত্যাকান্ড চালিয়ে পালিয়ে গেছে, তারা কতটা দুঃসাহসী ভাবতেই অবাক লাগছে। আমরা প্রচন্ড নিরপত্তাহীনতায় ভুগছি। দ্রুত এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের শাস্তির দাবীও জানান তিনি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শতে এক ব্যাক্তি জানান, পারিবারিক কলহের কারনেই এই হত্যাকান্ড হয়েছে। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা নি:সন্তান থাকায় প্রথমে এক ছেলে ও এক মেয়েকে দত্তক নেন। ছেলেটি বড় হওয়ার পর বখে চলে যায়। তারপর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে একমাত্র মেয়েকে নিয়েই সন্তানহীন ওই পরিবার সেখানে বসবাস করতেন। নিহত ওই ওই ব্যাংক কর্মকর্তার শালগাড়িয়া মহল্লায় একটি নিজস্ব বাড়ি রয়েছে। সম্পত্তির লোভেই একটি চক্র এই কাজটি করেছে বলেও তাদের ধারনা। অতি সম্প্রতি ওই ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রামের বাড়ি গিয়ে তার সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি কাকে যেন লিখে দেওয়ার কথা বলে আসাটাই তার জীবনে কাল হলো। তবে কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেন নাই।
এদিকে, ঘটনার পর পুলিশ সুপারসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক সুরতহালে পুলিশের ধারণা, নিহতদের শাসরোধে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে হত্যাকান্ডের আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশের ফরেনসিক বিভাগও।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, হত্যাকান্ডের ঘটনা তদন্তে পুলিশের সকল ইউনিট মাঠে নেমেছে। আমরা কিছু ক্লু পেয়েছি। এটি নিছক ডাকাতির কারণে হত্যাকান্ড নয়। তবে, তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি। হত্যাকান্ডের ঘটনায় পাবনা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্ততি চলছে বলেও জানান তিনি।
এই বিভাগের আরো খবর........