পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা চত্বরে নির্মিতব্য মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মসজিদ নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বারবার জানানো হলেও তারা নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা করছে না। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিটি জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে একটি করে একই ডিজাইনের মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বর্তমান সরকার। সারাদেশের মতো পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে নানারকম অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।
মসজিদ নির্মাণে স্টিলের শাটার ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নিম্নমানের বাঁশ ও কাঠের শাটার ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢালাই কাজে মোটা ডোমার বালি ২ দশমিক ২ এর পরিবর্তে ০ দশমিক ৭৫ এর লোকাল বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। ঢালাই কাজে নিম্নমানের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের গাঁথুনিতে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে গ্রেড বিমের তলায় শাটার না দিয়ে মাটির ওপর ঢালাই করা হচ্ছে। এমন নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে আটঘরিয়া মডেল মসজিদ নির্মাণে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
অনিয়মের বিষয়টি জানার পর গত ১১ এপ্রিল নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে এমন অনিয়ম দেখতে পান আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম। তিনি ঠিকাদারকে কাজের শিডিউল দিতে বললেও দেননি। তিনি মৌকিখভাবে ঠিকাদারকে কয়েকবার বলার পরও নিয়ম অনুযায়ী করছেন না। পরে বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান গত ১২ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর নিম্নমানের কাজের বিষয়ে চিঠি দেন। সেখানে তিনি ত্রুটি সংশোধন করে ডিজাইন, ড্রয়িং ও মান সম্পন্ন মালামাল ব্যবহার করে কাজটি বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম বলেন, মডেল মসজিদ নির্মাণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সেই প্রকল্প নিয়ে কোনো অনিয়ম, অবহেলা মেনে নেয়া যায় না। আমি কয়েকবার ঠিকাদারকে মৌখিকভাবে বললেও তিনি আমাকে কাজের শিডিউল দেননি বা নিময়মাফিক কাজ করছেন না। কাজের মধ্যে বেশকিছু অনিয়ম আমি দেখেছি। ঠিকাদার আমার কথা না শোনায় আমি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমরা চাই মডেল মসজিদটি সঠিকভাবে মান ঠিক রেখে কাজ করা হোক।
আটঘরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফুয়ারা খাতুন বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। ঠিকাদারের কাছে কাজের শিডিউল চেয়েছি। সেটি পাওয়ার পর এ বিষয়ে টেকনিক্যাল একজনকে নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জেলা প্রশাসককে জানাবো আমরা। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মোকছেদুল আলম নয়ন বলেন, নিম্নমানের অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা শিডিউল মোতাবেক কাজ করছি। বাঁশ ও কাঠের শাটার দিয়েছি ঠিক আছে। এখনও মূল স্ট্রাকচারের কাজ শুরু হয়নি। তখন স্টিলের শাটার ব্যবহার করা হবে। বালু খোয়া বুয়েট ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পরীক্ষা করে নেয়া হয়েছে। আর অভিযোগের বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পাবনার গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার ব্ক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আশরাফুল ইসলাম (সবুজ)
নির্বাহী সম্পাদক: রাকিবুল ইসলাম (রকিব)
©২০২০-২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || দৈনিক ঈশ্বরদী নিউজ