সকালে ঘাসের ডগায় ও ধানের শীষে শিশির ভেজা মুক্তকণা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতকে স্বাগত জানিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে চলছে কলাই আর চালকুমড়া দিয়ে কুমড়া বড়ি বানানোর মহোৎসব।
সোমবার (২৩ নভেম্বন) সকালে ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া গ্রামে গিয়ে একটি বাড়ির ছাদে কয়েকজন গৃহবধূকে কুমড়া বড়ি বানাতে দেখা গেলো। তাদেরই একজন আম্বিয়া বেগম বলেন প্রতি বছর শীত এলে চালকুমড়া ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করেন তারা। ওই কুমড়া বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় সংরক্ষণ করা হয় দীর্ঘদিন। পরে বিভিন্ন তরকারি রান্নার সময় কুমড়া বড়ি ছেড়ে দিলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
শীতে অন্যরকম আমেজে দেশের প্রতিটি গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন কর্মব্যস্ততার মাঝে সময় পার করে। গ্রামাঞ্চলের নারীরা বিভিন্ন মৌসুম খাদ্য তৈরিতে বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন।
কুমড়া বড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাই আর চালকুমড়া, সঙ্গে সামান্য মসলা। চলতি মৌসুমে বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ৭০-৮০ টাকা আর চাল কুমড়া ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়। সাইজ হিসেবে চালকুমড়া ৫০-৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়। একটি বড় চালকুমড়ার সঙ্গে দুই থেকে তিন কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভালো হয় বলে মনে করেন গ্রামের অধিকাংশ নারীরা।
প্রথমে মাসকলাই রৌদ্রে শুকিয়ে যাতায় ভেঙ্গে পরিস্কার করে কিংবা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। প্রায় ৪-৫ ঘন্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয় বলে জানান কুমড়া বগি তৈরিতে অভিজ্ঞ নারীরা। তারপর ঢেঁকি বা শিল-পাটা বেটি নিয়ে কুমড়া বড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তবে এলাকার বেশকিছু অঞ্চলে কুমড়া বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করার জন্য। যদিও প্রত্যান্ত অঞ্চলে মেশিন না থাকায় নারীদের হাতে তৈরি করতে হয় কুমড়া বড়ি। দুইটি উপকরণের সংমিশ্রণে তৈরিকৃত কুমড়া বড়ি মাঠ, বাড়ির আঙ্গিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে রোদে বড়ি বসিয়ে সন্ধ্যার দিকে উঠানো হয়। বিভিন্ন রংয়ের পাতলা পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হবে। কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানোর দৃশ্য দেখতেও দারুণ লাগে। কুমড়া বড়ি বসানোর পর কয়েকদিন একটানা রোদে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কমহলে ৫-৭ দিন পর্যন্ত লেগে যাওয়া শুকানো বড়ি কাপড় থেকে উঠিয়ে অন্য পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়।
আরো কয়েকজন নারী জানান, একত্রিত হয়ে কুমড়া বড়ি দিতে সহযোগিতা করা রেওয়াজ রয়েছে। ধনী-গরিব সবাই এ বড়ির প্রতি দুর্বল। কেননা বড়ি প্রতিটি তরকারিতে বাড়তি স্বাদ এনে দেয়। বড়ি ভেঙে পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাজি করলে এক চমৎকার খাবার তৈরি হয়। এছাড়া বড়ি দিয়ে রান্না করা বেগুন, লাউ, ফুলকপি, আলু ইত্যাদি তরকারির যেন স্বাদই আলাদা।
স্থানীয় কিছু নারী জানান, যুগ যুগ ধরে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ বাড়িতে কুমড়া বড়ি দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। সময়ের আবর্তে কুমড়া বড়ি- এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তারপরও অনেক মানুষ বাড়িতে কুমড়া বড়ি তৈরি করে খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : আশরাফুল ইসলাম (সবুজ)
নির্বাহী সম্পাদক: রাকিবুল ইসলাম (রকিব)
©২০২০-২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || দৈনিক ঈশ্বরদী নিউজ