আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে লালপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস থেকে গুড় সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পুবালি বাতাসে অপরুপ সৌন্দর্যে সকলের মন মাতিয়ে তুলছে মিষ্টি খেজুর রসের ঘ্রাণ। কাক ডাকা ভোরে রস সংগ্রহ ও বিকালে চলছে গাছ পরিচর্যার কার্যক্রম। এবার কিছুটা আগেই লালপুর উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভূত হচ্ছে মৃদু শীত।
নাটোরের লালপুরে উপজেলার দুড়দুড়ীয়া, বিলবাড়ীয়া , আড়বাব, দুয়ারিয়া, এবি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় শীত মৌসুমের শুরু থেকেই সুমিষ্ট খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করে চলেছে গাছিরা। গাছ কেটে রস থেকে গুড় সংগ্রহের জন্য শীত আসার সাথে সাথে খেজুর গাছ পরিষ্কারের মাধ্যমে গাছ প্রস্তুতি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
রস সংগ্রহের জন্য গাছে চাচ করা হয় ঐ চাচের উপর থেকে নিচের দিকে নালী তৈরী করে বাঁশের নল বসিয়ে নলের দুই পাশে বাঁশের শলার খুটি বসিয়ে মাটির হাড়ি পেতে রাখতে হয়। পর দিন খুব সকালে প্রতিটি গাছ হতে রসের হাড়িগুলো নামিয়ে রস একত্র করে ড্রামে জাল দিয়ে গুড় বা পাটালী তৈরি করা হয়। প্রতিদিন খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা জ্বালানোর কাজ শেষে গুড়-পাটালী তৈরী করে বাজারে নিয়ে ভেজাল মুক্ত গুড় এবং পাটালী বানিয়ে ভাল দামে বিক্রয় করে গাছিরা সংসার চালিয়ে থাকেন ।
গাছিরা শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য তাদের ব্যবহৃত নতুন ও পুরাতন বাটাল বানানো এবং পুরানোর জন্য কামাড়ের দোকানে ভিড় করছেন। এবং অন্য দিকে কুমোরদের কাছে ও গাছিদের রস সংগ্রহের হাড়ি দিতে ভির করতে দেখা গেছে। স্থানীয় কিছু কুমোরদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই মৌসুমে মাটির হাড়ি তৈরি করে সেটি পুড়িয়ে রাখলে হাড়ির চাহিদা এবং ভাল দামে বিক্রয় করে লাভবান হওয়া যায়।
খেজুর রস গুড়-পাটালীর স্বাদ ভাল এবং চাহিদা বেশি হওয়ায় খেজুর রসের ভিজাপিঠা, কাঁচা রসের ক্ষীর, পায়েস, ভাপা পিঠা, পাটালী সবার মুখে যেন শীতকালে নিত্য দিনের সঙ্গী হয়ে ছিল। খেজুর রসের গুড় এবং পাটালী তৈরী করে এলাকার মানুষের শীতের পিঠা খাওয়া, পরিবারের চাহিদা মিটানোসহ বাজারে বিক্রয় করে লাভবান হয়ে থাকতেন এলাকার গাছিরা।