এবার কাউন্টার থেকে ট্রেনের টিকিট কিনতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করতে হবে। আর বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে ট্রেনভ্রমণে পাসপোর্ট প্রদর্শন করে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। আজ বুধবার থেকে রেলওয়ের এই পদ্ধতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। তবে এই পদ্ধতি একেবারে নতুন নয়। বর্তমানে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হয়। আর আজ থেকে কাউন্টারে টিকিট কেনার সময় একই নিবন্ধন প্রথা চালু হচ্ছে।
এর আগেও একবার জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছিল। তবে এই পদ্ধতি বেশিদিন টেকেনি। গত ঈদুল ফিতরে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
এদিকে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ার খবরে অনলাইন ও কাউন্টারে রেলের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহের হিড়িক পড়ে। টিকিট কেনার নতুন পদ্ধতি আজ থেকে চালু হওয়ার আগে ঝামেলা এড়াতে গতকাল অনেকে আগামী শনিবার পর্যন্ত অগ্রিম টিকিট কিনে নিয়েছে। কারণ গতকাল পর্যন্ত যেসব যাত্রী অগ্রিম টিকিট কিনেছে তাদের ক্ষেত্রে আগামী চার দিন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে না। ফলে নতুন পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হতে মূলত আগামী শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলের একজন কর্মকর্তা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই পদ্ধতি কার্যকর করা কঠিন হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন ছেড়ে গেলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না। আন্ত জেলা পর্যায়ে যাত্রীরা টিকিটই সংগ্রহ করে না। নিবন্ধন তো আরো পরের কথা। তবে উদ্যোগটা ভালো, কার্যকর করা গেলে যাত্রীরা কালোবাজারির হাত থেকে বাঁচবে।’
নতুন পদ্ধতি চালু প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে রেলওয়ের আন্ত নগর ট্রেনের টিকেটিং ব্যবস্থা, টিকিট চেকিং ব্যবস্থায় পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের প্রবর্তন এবং অনলাইনে কেনা টিকিট অনলাইনে ফেরতের ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে।
নতুন নিবন্ধনপ্রক্রিয়া : নতুন পদ্ধতির নিবন্ধন প্রসঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা মা বা বাবার নাম ও এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করা রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করে পৃথক বা এককভাবে টিকিট কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে টিকিটের ওপর মুদ্রিত নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলকভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে।
বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে এবং পাসপোর্টের ছবি আপলোড করে নিবন্ধন করবে। ভ্রমণকালে অবশ্যই তাকে নিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা পাসপোর্ট অথবা ছবিসংবলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।
পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেশের বিভাগীয় শহরের রেলস্টেশন এবং আন্ত নগর ট্রেনের প্রারম্ভিক স্টেশনগুলোতে সর্বসাধারণের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে।
টিকিট ফেরতের টাকা পাওয়া যাবে অনলাইনে : যাত্রীরা যাত্রা বাতিল করলে রেলওয়েকে টিকিট ফেরত দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাউন্টারে গিয়ে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিতে পারত। অনলাইনে কেনা টিকিটও কাউন্টারে ফেরত দিয়ে কাউন্টার থেকে টাকা নেওয়া যেত।
নতুন পদ্ধতিতে এই ব্যবস্থা আর থাকছে না। অনলাইনে কেনা টিকিট অনলাইনেই ফেরত দিতে হবে। আর যাত্রীরা যে পদ্ধতিতে টিকিটের টাকা পরিশোধ করেছিল, সেই একই পদ্ধতিতে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।