শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন

অন্ধকার দেখছেন ঈশ্বরদীর লিচুচাষিরা

বার্তা কক্ষঃ
আজকের তারিখঃ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- লিচুর রাজধানী” হিসেবে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে উঠতে শুরু করেছে আঁটির লিচু। আর এক সপ্তাহ পরে উঠতে শুরু করবে বোম্বায় লিচু। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে লিচুর ফলন ভালো হলেও, নেই লিচু মোকামগুলোতে নেই চাষি ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেন-দরবারে কর্মমুখরতা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আগাম টাকা দিয়ে লিচু বায়না করতে এখনো আসা শুরু করেনি পাইকারী ব্যবসায়ীরা। উল্টো আগাম বায়না করা বাগান ফেরত দিয়ে টাকা নেওয়ার কয়েকটি ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনা বাণিজ্যিক ভিত্তিক লিচু উৎপাদনকারী সহস্রাধিক চাষির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! বাগানভর্তি লিচু কার কাছে লিচু বিক্রি করবেন, সে হিসেব মেলাতে পারছেন না চাষিরা। কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্ভাবনায় চোখে অন্ধকার দেখছেন চাষিরা।

পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল লতিফ জানান, মন্ত্রী, এমপিসহ ঊদ্ধর্তন কর্তকর্তাদের সঙ্গে কথা চলছে কিভাবে এই পরিস্থিতিতে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা যায়।

লিচু বাগান মালিকরা জানান, বিগত বছরগুলোর তুলনায় ফলন ভালো হলেও এবার ক্রেতা নেই। লিচুর ফুল আসা শুরুর পর অনেক বাগান কেনাবেচা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরুর পর লিচু বিক্রির অনিশ্চয়তা থেকে বাগান দিয়ে আগাম টাকা ফেরত নিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এদিকে, বাগানে লিচু পাকতে শুরু করলেও দেখা নেই পাইকারি ব্যবসায়ীদের।

উপজেলার আওতাপাড়া গ্রমের লিচুচাষি আলম হোসেম বলেন, প্রায় ১০ বিঘার ৮টা বাগান ইজারা নিয়েছি। সেখানে ১০০টির মতো লিচু গাছ রয়েছে। বাগান প্রতি ইজারা ব্যয় ও কীটনাশকসহ ব্যয় বাবদ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও ফলন ভালো। এরইমধ্যে কিছু গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে। কিন্তু এবার ঢাকার পাইকাররা আসবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

অগ্রিম বিক্রি করেও বাগান ফেরত পাওয়ার বিষয়ে লিচুচাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, লকডাউনের আগে অগ্রিম প্রদান করে বাইরের এক পাইকার তাদের একটি বড় বাগান নেন। তবে লকডাউনের কারণে অগ্রিম অর্থ ফেরত নিয়ে গেছেন। এখন বাগান ভর্তি লিচু নিয়ে বিপদে পড়েছেন তারা। এখন লিচু কিভাবে বিক্রি করবেন সেই দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

ক্রেতার অভাবে বাগানেই পেকে যাচ্ছে সব লিচু। দৈনিক ঈশ্বরদী নিউজ

সাকিব আল হাসান সোহেল নামে কামালপুর চর এলাকার এক লিচু চাষি জানান, তাদের তিন বিঘার বাগানে এবার ভালোই লিচু ধরেছে। এখন পর্যন্ত অর্ধ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি কীটনাশক ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ। ঝড়-বাদলে লিচুর ক্ষতি না হলে শেষ পর্যন্ত ভালো লিচু ফলন হবে। কিন্ত লকডাউন পরিস্থিতিতে কোনো পাইকার লিচু কিনতে না এলে লোকসানে স্থানীয় বাজারে লিচু বিক্রি করতে হবে।

লিচু বাজারজাতকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মানিকনগরের লিচুচাষি বাদশাহ প্রামাণিক বলেন, লিচু পচনশীল হওয়ায় সবসময় ঝুঁকি থাকে, এবার তা অন্যবারের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। লিচু আহরণ ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত ১০ হাজার শ্রমিক কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছে। লিচুর কোটি টাকার ব্যবসা এবার অনিশ্চিত।

এ বিষয়ে সলিমপুরের লিচুব্যবসায়ী ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমাদের লিচুর বাজার রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার ক্রেতা নির্ভর। করোনাভাইরাসের কারণে অন্য জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ারা এবার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। তাই আমরাও বাগান নেওয়া বা চাষিদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসতে পারছি না। এবার প্রায় বাগানেই ফলন ভালো হওয়ায় ন্যায্যমূল্য নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় তিন হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা তিন লাখের ওপর। এর মধ্যে দুই লাখ গাছের বয়স ১৫ বছরের বেশি। এ ছাড়া সারা উপজেলাতেই বসতবাড়ির আশপাশেও রয়েছে প্রচুর লিচুগাছ। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের হিসাবে বড় গাছগুলোতে এবার নিম্নে ১০ হাজার, ঊর্ধ্বে ২৫ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট গাছে লিচু এসেছে তিন থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত। বড় গাছে গড়ে ১০ হাজার ও ছোট গাছে ৩ হাজার করে ধরলে এবার লিচুর সংখ্যা প্রায় ২৩০ কোটি। পাইকারিতে গড়ে প্রতি লিচুর দাম দেড় টাকা ধরা হলেও দাম হয় ৩৪৫ কোটি টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে বসতবাড়ির আশপাশের গাছের লিচুর দাম।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, “আঁটির লিচু বাজারে উঠছে। বোম্বে লিচু উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। করোনা পরিস্থির কারণে পণ্যবাহী গাড়ির ভাড়া বেশি হওয়ায় এবার লিচুর পাইকার ব্যবসায়ীরা এই অঞ্চলে লিচু ক্রয় করতে আগ্রহ একদমই কম দেখাচ্ছেন। তারা এখনও তেমন একটা এ অঞ্চলে আসা শুরু করেন নাই। আমরা মন্ত্রী, এমপিসহ ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে চলেছি। তাদের সমস্ত পরিস্থিতি অবগত করেছি।”


এই বিভাগের আরো খবর........
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
error: কপি করার অনুমতি নেই !
error: কপি করার অনুমতি নেই !